হাতের সৌন্দর্যের অনেকটাই জড়িত নখের সাথে। নখ সুন্দর মানে হাতেও ফুটে ওঠে সে সৌন্দর্য। কিন্তু এই নখ ভালো রাখতে আমরা কতটা সচেতন? রেগুলার পানির কাজ করা, নিয়মিত নখ পরিষ্কার না করা, ট্রিম না করা, নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়া এমন অনেক কারণে নখের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। সেই সাথে নখ ভেঙে যাওয়া, হলুদ হয়ে যাওয়া, নখের নিচে ব্যাকটেরিয়া জমার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এক কথায় নখ হয়ে ওঠে আনহেলদি। এই সমস্যাগুলো দূর করে হেলদি নেইলস পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই? উপায় অবশ্যই আছে। তবে সেজন্য আপনাকে জানতে ও মানতে হবে কিছু বিষয়। চলুন জেনে নেই হেলদি নেইলস পাওয়ার জন্য আপনি কী কী কাজ করবেন এবং কোন কাজগুলো করবেন না।

নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করতে এবং হেলদি নেইলস পেতে করণীয়

নখ পরিষ্কার রাখা

হাত ধোয়ার পর ভালো করে শুকিয়ে নিন। খেয়াল রাখুন যেন নখে কোনো ব্যাকটেরিয়া না জমতে পারে। কারণ জার্ম ও ব্যাকটেরিয়া থেকেই শুরু হয় নানা সমস্যা। বারবার পানি দিয়ে হাত ধুলে নেইলস স্প্লিট হতে পারে। তাই ডিশ ওয়াশ করার সময় গ্লভস পরে নিলে নখ সুরক্ষিত থাকে। ভেজা হাতে কাজ করার পর অবশ্যই হাত ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। এতে নখের নিচে ডার্ট বা ব্যাকটেরিয়া গ্রো করবে না। নখ ভালো রাখতে একটি পরিষ্কার টুথব্রাশে অল্প বডি স্ক্রাব দিয়ে নখের চারপাশে স্ক্রাবিং করে নিতে পারেন। তবে হাত ধোয়ার পর অবশ্যই হাত ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর ভ্যাসলিন অথবা ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিন।

1606610772 5fc2ef54ef45e nail

কিউটিকল ট্রিম করা ও ময়েশ্চারাইজড রাখা

নখের যত্ন নেয়ার রুটিনের মধ্যে কিউটিকল ভালো রাখা অ্যাসেনশিয়াল একটি পার্ট। এজন্য কিউটিকল ট্রিম করতে হবে এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে। নেইল ট্রিমার দিয়ে নেইলের কিউটিকলের চারপাশে ট্রিম করে নিতে পারেন। আর ময়েশ্চারাইজ রাখার জন্য ইউজ করতে পারেন কিউটিকল অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলি। এগুলোর যে কোনোটি রেগুলার ইউজ করলে কিউটিকল যেমন ভালো থাকবে, তেমনই ভালো থাকবে নখ।

প্রোটিন ডায়েট ফলো করুন

আমাদের নখের গঠন হয় কেরাটিন নামক প্রোটিন দিয়ে। আর এই কেরাটিন পাওয়া যায় মাছ, বাদাম, বিনস ইত্যাদি খাবার থেকে। তাই আমরা এই খাবারগুলো যত বেশি খাবো তত নখ ভালো থাকবে। অনেকেই প্রোটিনের চাহিদা অ্যাডজাস্ট করার জন্য ডেইলি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বায়োটিন ও ফিশ অয়েল নিয়ে থাকেন। এটাও নখের জন্য ভালো।

প্রোটেকশনের জন্য বেইজ কোট অ্যাপ্লাই করুন

মেনিকিওর করা শেষে ঘরের কাজ করতে গিয়ে অল্প সময়েই নখের অবস্থা খারাপ হয়ে যাক এমনটা আমরা কেউই চাই না, তাই না? তাই মেনিকিওর লং লাস্টিং করার জন্য নখে নেইল পলিশ দিয়ে একটি বেইজ কোট করে নিতে পারেন। এটি নখের প্রোটেকটিভ লেয়ার হিসেবে কাজ করবে এবং নখের কালার ডিসকালার হওয়ার হাত থেকেও বাঁচাবে।

রেগুলার ট্রিম করুন
আমরা অনেকেই নখ বড় করি। যার কারণে রেগুলার ট্রিম করার কথাও ভাবি না। কিন্তু নখ সফট রাখতে হলে রেগুলার ট্রিম করাটাও জরুরি। নখের কর্ণারগুলো নেইল ফাইল দিয়ে রাউন্ড শেইপে ট্রিম করে নিলে দেখতেও বেশ ভালো লাগবে।

নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করতে যা করবেন না
ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করতে যা করবেন না

নখ কামড়াবেন না

অনেকেরই দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস থাকে। এই অভ্যাসটি নখের বেশ ক্ষতি করে। এতে নখের কিউটিকলেরও ক্ষতি হয়। বারবার মুখে হাত দেয়ার কারণে ডার্ট ও জার্ম সহজেই নখে জমে যায়। তাই নখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এ অভ্যাস যত দ্রুত বাদ দেয়া যায়, ততই ভালো।

নেইল কেয়ার টুলস শেয়ার করবেন না

নেইল কেয়ার টুলস কখনোই শেয়ার করা উচিত নয়। ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ব্যাকটেরিয়া আছে এমন কেউ যদি টুলস ইউজ করেন তাহলে আপনারও ফাঙ্গাস হতে পারে। এ ধরনের স্কিন প্রবলেমগুলো নেইল টুলস থেকে খুব সহজেই অন্যজনের কাছে ছড়ায়। তাই নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করার জন্য এই কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

ফাঙ্গাস অথবা ইনফেকশন ইগনোর করবেন না
নেইল ফাঙ্গাস দেখতে সাধারণত সাদা অথবা হলদে স্পটের মতো হয়। নখের উপরে এই স্পট দেখা যায়। ফিঙ্গার অথবা টো নেইলসের ইনফেকশন হলে নখ ডিসকালার হয়ে যাবে, সেই সাথে দেখা দেবে ক্র্যাক ও ব্রেক হয়ে যাওয়ার সমস্যা। ইনফেকশনের কারণে নেইল বেড এর চারপাশে ইনফ্ল্যামেশন বা ব্যথা হতে পারে, অনেকের ব্লাডও বের হতে পারে। অনেকেই ভাবেন ক্যালসিয়াম ও কেরাটিনের ঘাটতির কারণে এগুলো হচ্ছে। কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়। এ ধরনের কোনো সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

নখকে টুলস ভাববেন না

অনেকেই নখ দিয়ে নানা কাজ করেন। যেমন- ক্যান ওপেন করা, ছুরির বদলে নখ দিয়েই খাবার ছিলে ফেলা ইত্যাদি। এই কাজগুলো করার কারণে নখ খুব সহজেই ভেঙে যায় বা ক্র্যাক হয়ে যায়। আর এমন হলে নখের নিচে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করতেও সময় লাগে না। তাই নখকে টুলস ভাবা বন্ধ করুন।

নখ কেন ভেঙে যায়?
কেন ভেঙে যায়

নখ ভেঙে যাওয়া খুব কমন একটি সমস্যা। বেশ কিছু কারণে এই সমস্যা হয়। যেমন-

  • বারবার পানি ব্যবহার করলে অথবা ডিটারজেন্ট দিয়ে বেশি কাজ করলে
  • অনেকদিন ধরে নেইলপলিশ ইউজ করলে
  • বারবার রিমুভার দিয়ে নেইল পলিশ তুললে
  • শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন- থাইরয়েড, ম্যালনিউট্রেশন, লিভারের সমস্যা থাকলে
  • ফাঙ্গাল ইনফেকশন (নখ পাতলা হয়ে গেলে, নখ থেকে ব্যাড স্মেল আসলে) থাকলে
  • শরীরে প্রোটিন ও ভিটামিন সি এর ঘাটতি হলে

নখ ভাঙা রোধ করার ঘরোয়া উপায়

নখের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি যেন ভেঙে না যায়, সেজন্য সচেতন থাকতে হবে। যে কাজগুলো প্রতিদিন করা হয়, সেগুলো তো আর বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু একটু সচেতন হলে নখও ভালো থাকবে, নখ ভাঙবেও না।

যেভাবে ঘরোয়া উপায়ে নখ ভাঙা রোধ করা যায়

১) পানি ধরার আগে গ্লভস পরে নিন। যদি গ্লভস না থাকে, তাহলে কাজ শুরুর আগে নখে কিছুটা ভ্যাসলিন অ্যাপ্লাই করে নিন। কাজ শেষে অবশ্যই লোশন বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।

২) কিছুদিন পরপর নখ ট্রিম করে নিন। এতে নখ ভাঙার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।

নখের হলদে ভাব কীভাবে দূর করা যায়?

খাবার খাওয়ার পর নখ হলুদ হয়ে গিয়েছে, আর সেটি দেখে মন খারাপ হয়নি এমন কাউকে বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই প্রবলেমটিও খুব কমন, তাই না? এই প্রবলেম দূর করতে খাবার খাওয়া শেষে লেবুর স্লাইস দিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করে নিন। হলদে ভাব কমে আসবে, সেই সাথে দাগও বসবে না।

খেয়াল রাখুন নেইল টুলসের দিকেও

নখের যত্নের জন্য অনেক ধরনের টুলস আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু সেগুলো নিয়মিত ক্লিন না করার কারণে ক্ষতি হয় নখেরও। কীভাবে? কারণ এসব টুলসে জমতে পারে ব্যাকটেরিয়া। যা থেকে হতে পারে ইনফেকশন। তাই এই টুলসগুলোও ক্লিন করতে হবে নিয়মিত। আর একই টুলস দিয়ে কয়েক বছর কাটিয়ে দেবেন এমন কথা মোটেও ভাববেন না। কয়েক মাস পর পর অবশ্যই বদলে নিন নেইল টুলস।

নখের বিভিন্ন সমস্যা এড়াতে কী কী করতে পারেন তা তো জেনে নিলেন। এবার নিয়মিত যত্ন কিন্তু নিতে হবে আপনাকেই। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও মেকআপের বিভিন্ন প্রোডাক্ট পেতে অনলাইনে অর্ডার দিতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম এ। এছাড়া সাজগোজের চারটি শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্ট।